প্রশ্ন : মুহতারাম, মানবদেহের গঠন ও রোগ-নির্ণয় সংক্রান্ত শিক্ষার প্রয়োজনে আমাদের মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে মানবদেহের পোস্টমর্টেম করতে হয়, যাকে অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন বলা হয়। শিক্ষার স্বার্থে এ ধরনের ডিসেকশন করা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ? বৈধ হয়ে থাকলে এর শর্তাবলি ও সীমারেখা কী?
উত্তর : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহ তাআলা মানুষের মর্যাদাকে অত্যন্ত উচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ.
অর্থ : বাস্তবিকপক্ষে আমি আদম সন্তানকে মর্যাদাবান করেছি। [সুরা বনি ইসরাইল, ৭০]
আর মানুষের এই সম্মান মৃত্যুর পরেও অক্ষুণ্ন থাকে। এ জন্য মানুষের মরদেহের সঙ্গেও সম্মান-পরিপন্থি কোনো আচরণ করা মৌলিকভাবে জায়েয নয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
كسر عظم الميت ككسره حيا
অর্থাৎ, মৃত মানুষের হাড় ভাঙা জীবিত অবস্থায় তার হাড় ভাঙার মতো। [সুনানু আবি দাউদ, ৩২০৭]
আর বলা বাহুল্য যে, অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশনের জন্য মানবদেহ যেভাবে কাটাছেঁড়া করা হয়, তা মানুষের সম্মান-পরিপন্থি। এ জন্য সাধারণ অবস্থায় অবস্থায় মানবদেহের ডিসেকশন জায়েয নয়।
কিন্তু শরিয়তের আরেকটা স্বীকৃত মূলনীতি হলো—
الضَّرُوْرَاتُ تُبِيْحُ الْمَحْظُوْرَاتِ.
অর্থ : অনিবার্য প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কেও বৈধ করে তোলে। অর্থাৎ যে প্রয়োজন অগ্রাহ্য করলে ব্যক্তি কিংবা জাতির ক্ষতি অপরিহার্য হয়, এমন প্রয়োজনে নিষিদ্ধ বিষয়ও বৈধ হয়ে থাকে।
আর বর্তমান চিকিৎসা-বিজ্ঞান, চিকিৎসা-শিক্ষা ও চিকিৎসা-সেবার বাস্তবতায় অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মানবদেহের বাস্তব গঠন জানা, রোগের প্রকৃতি ও উৎস চাক্ষুষভাবে উপলব্ধি করা, সার্জিক্যাল দক্ষতা অর্জন করা— সর্বোপরি মানুষের জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পারদর্শী চিকিৎসক তৈরি করতে এর বিকল্প নেই। এই প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করলে জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং এই অনিবার্য প্রয়োজন পূরণে ডামি বা অন্য কোনো প্রাণীর মরদেহ যথেষ্ট হলে তা দ্বারাই অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন করতে হবে। আর ডামি বা অন্য কোনো প্রাণীর মরদেহ যথেষ্ট না হলে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে মানবদেহের অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশনও জায়েয হবে—
১. জীবদ্দশায় মৃত ব্যক্তি অথবা মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণের অনুমতি প্রদান করা।
২. শিক্ষা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যতটুকু কাটাছেঁড়া প্রয়োজন, কেবল ততটুকুই করা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাটাছেঁড়া বা অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ না করা।
৩. নারী মৃতদেহের ডিসেকশন যথাসম্ভব নারী শিক্ষার্থী/চিকিৎসকদের মাধ্যমে করা। তবে একান্ত প্রয়োজনে পুরুষ চিকিৎসক/শিক্ষার্থীরাও করতে পারবে।
৪. ডিসেকশন শেষে মরদেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে দাফন করা। কোনো অংশ অসম্মানজনকভাবে ফেলে না দেওয়া।
উপরিউক্ত শর্তগুলোর যথাযথ অনুসরণ করা হলে জনকল্যাণের স্বার্থে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য মানবদেহের অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন শরিয়তের আলোকে অনুমোদিত।
আরও দ্রষ্টব্য, ফিকহুন নাওয়াযিল, ৪/২০৯; কারারাতুল মাজমাইল ফিকহিয়্যিল ইসলামি, পৃ. ২১২
১২২ টি প্রশ্ন আছে
৬০ টি প্রশ্ন আছে
১২১ টি প্রশ্ন আছে
২১৭ টি প্রশ্ন আছে
২৪ টি প্রশ্ন আছে
৭৯ টি প্রশ্ন আছে
৩৩ টি প্রশ্ন আছে
৫৮ টি প্রশ্ন আছে
৬৩ টি প্রশ্ন আছে
১৪১ টি প্রশ্ন আছে
২১৯ টি প্রশ্ন আছে
৮৪ টি প্রশ্ন আছে