logo

হাফেজা শিক্ষিকা মাসিক চলাকালে কীভাবে কুরআন পড়াবে?

Asif Nawaz
পবিত্রতা ও সালাত
৫ দিন আগে
১৩

প্রশ্ন : আমি একজন শিক্ষিকা। সকালে গ্রামের বাচ্চাদেরকে কুরআন শরিফ পড়াই। মাসিকের সময় ছেলেমেয়েদেরকে স্পর্শ ছাড়া কুরআন শরিফ কিংবা ছোট ছোট সুরা পড়াতে পারব কি?

উত্তর : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য গোসল ফরজ হয়– এমন অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। গোসল ফরজ হওয়ার মতো অপবিত্রতা নিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নয়। এজন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসল ফরজ হলে কুরআন পড়তেন না। আলি ইবনে আবু তালেব রা. বলেন, 

كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقْضِي الْحَاجَةَ فَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ، وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ، وَلَمْ يَكُنْ يَحْجِزُهُ ‌إِلا ‌الْجَنَابَةُ

অর্থ : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজন সারতেন। এরপর আমাদের সঙ্গে গোশত খেতেন এবং কুরআন পড়তেন। গোসল ফরজ হওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিষয় তাকে কুরআন পাঠ থেকে বিরত রাখত না। [মুসনাদে আহমাদ, ১০১১]

এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নয়। 

হায়েজা (ঋতুবতী) ও নুফাসা (যার সন্তানপ্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাব চলমান) নারীর বিধানও অনুরূপ কিনা– এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে তাইমিয়া রহ.-সহ অনেক আরব ফকিহের মতে প্রয়োজনের মুহূর্তে হায়েজা ও নুফাসা নারীর জন্য কুরআন তেলাওয়াত জায়েয। কিন্তু জুমহুর তথা মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ফকিহের মতানুসারে গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তির মতো হায়েজা ও নুফাসা নারীদের জন্যও কুরআন তেলাও করা নাজায়েয। বিখ্যাত ফকিহ ইবনে কুদামা রহ. বলেন,

وأما الحائضُ والنُّفَساءُ فإنهما في معنى الجُنُب في حُرمة قراءة القرآن

অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে হায়েজা (ঋতুবতী) ও নুফাসা (যার নিফাস চলমান) নারীর বিধান গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তির মতোই। [আল মুগনি, ১/১৯৫]

প্রসিদ্ধ হানাফি ফকিহ উবাইদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রহ. বলেন,

ولا تقرأ كجنب ونفساء سواء كان أية أو ما دونها عند الكرخي وهو المختار

অর্থাৎ, গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তির মতো হায়েজা (ঋতুবতী) ও নুফাসা (যার নিফাস চলমান) নারীও কুরআন তেলাওয়াত করবে না। ইমাম কারখির মতানুসারে পূর্ণ আয়াত হোক বা তার চেয়ে কম– উভয়ই নিষিদ্ধ। আর এটিই গ্রহণীয় মত। [শারহুল বিকায়া ১/১৩০]

অতএব হায়েয চলাকালে স্বাভাবিক কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নয়। তবে ফকিহগণ বলেছেন, শিক্ষিকা মহিলা হায়েয অবস্থায় পড়ানোর জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারবেন যে, তিনি এক এক শব্দ করে পড়াবেন এবং প্রত্যেক দুই শব্দের মাঝে মৃদু বিরতি দেবেন। আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়্যা গ্রন্থে এসেছে– 

‌وإذا ‌حاضت ‌المعلمة فينبغي لها أن تعلم الصبيان كلمة كلمة وتقطع بين الكلمتين

অর্থাৎ, শিক্ষিকা যখন ঋতুবতী হবে, তখন উচিত হলো সে শিশুদেরকে এক এক শব্দ করে শেখাবে এবং প্রত্যেক দুই শব্দের মাঝে থামবে। [আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়্যা, ১/৩৮]

অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালে আপনি স্বাভাবিক সময়ের মতো কুরআন পড়াতে পারবেন না। তবে এক এক শব্দ করে পড়াতে পারবেন। 

আরও দ্রষ্টব্য, আল-ফাতাওয়াত তাতারখানিয়্যা, ১/৪৮০; আল-বাহরুর রায়িক, ১/২১০; রাদ্দুল মুহতার, ১/৫৩৫


একই প্রশ্ন আপনার বন্ধু-প্রিয়জনদের থাকতে পারে,
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে উত্তরটি শেয়ার করে আপনিও সদকায়ে জারিয়ায় অংশ নিন

বিভাগসমূহ

ঈমান ও আকায়েদ

১২২ টি প্রশ্ন আছে

কুরআনুল কারীম

৬০ টি প্রশ্ন আছে

হাদীস ও সুন্নাহ

১২১ টি প্রশ্ন আছে

পবিত্রতা ও সালাত

২১৪ টি প্রশ্ন আছে

যাকাত ও সাদাকাহ

২৪ টি প্রশ্ন আছে

সিয়াম/রামাদান

৭৯ টি প্রশ্ন আছে

হাজ্জ ও উমরাহ

৩১ টি প্রশ্ন আছে

কুরবানী ও আকীকা

৫৮ টি প্রশ্ন আছে

ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন

৬৩ টি প্রশ্ন আছে

আখলাক ও ইসলামী শিষ্টাচার

১৪১ টি প্রশ্ন আছে

হালাল-হারাম

২১৭ টি প্রশ্ন আছে

বিবাহ ও তালাক

৮৩ টি প্রশ্ন আছে

ফেসবুক পাতা

নিয়মিত ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সংযুক্ত থাকুন